অনির্বাণ ভট্টাচার্য x সৃজিত মুখার্জী(Anirban X Srijit)-
SVF বরাবর নতুন মুখ তুলে ধরে এবং নতুন করে brand তৈরি করে। বেশির ভাগ বড়ো স্টার আজকের দিনে svf এর হাত ধরেই তারকা হিসেবে উঠে এসেছে। এবং তাদের অনেকের সাথেই svf এলিট কনট্রাক্টে যায়, দেব, জিৎ, আবীর, যশ, বনি এরা সবাই এক সময় svf এর contract এর মধ্যে দিয়ে গেছে। এবং এইভাবেই svf বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কাছে নতুন মুখ তুলে ধরেছে। অনির্বাণ ভট্টাচার্য এইরকম একজন অভিনেতা, যিনিও svf এর সাথে contract এ আছেন। আবার উল্টো দিকে পরিচালক সৃজিত মুখার্জীও svf এর contract এ ছিলেন।

তাহলে শুধু এটাই কি এক মাত্র কারণ পরিচালক এবং অভিনেতার ভালো রসায়নের? আসুন দেখে নিই দুই পুরুষের রসায়ন এবং তার উপহার।
সৃজিত–অনির্বাণ ডুও শুরু হয় 2018 সালে উমা দিয়ে, যেখানে অনির্বাণ ভট্টাচার্য একটি টিপিক্যাল অ্যান্টিহিরোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, চরিত্রের নাম মোহিতোষ সূর। আবার যাকে একজন সাধারণ বাঙালি হিসেবেও ভাবা যেতে পারে, কোনো বাঙালিই নকল দুর্গা পুজো নিয়ে আনন্দিত হবে না, বরং এই বাড়াবাড়ি দেখে বিরক্ত হওয়ারই কথা। সৃজিত মুখার্জীর হাত ধরে অনির্বাণ সাজল মহিষাশুর।

একই বছরে সৃজিত মুখার্জীর সাথেই এলো অনির্বাণের পরের ডার্ক চরিত্র সত্য ব্যানার্জি। এক যে ছিল রাজা তে যে একজন পাকা ষড়যন্ত্রী, বোনের দুর্দশা, ভগ্নীপতির (রাজা) স্বেচ্ছাচারিতা দেখে যে তাকে আসতে আসতে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। অনির্বাণকে নেগেটিভ চরিত্রে আরো পরিণত মনে হয়।
পরের বছর অর্থাৎ 2019এ মুখার্জীর শাজাহান রিজেন্সীতে স্বস্তিকা মুখার্জীর বিপরীতে অনির্বাণ, অর্নব সরকাররূপে। অর্নব সদ্য যৌবনে পা দেওয়া এক ধনী ছেলে, যে খুব সহজে ভালোবেসে ফেলে বলে “আমার সাথে বুড়ো হবে, কমলীনি?” আবার পরে সেই সিদ্ধান্তে নিজেই স্থির থাকতে পারে না। কমলীনির মৃত্যুতে অর্নবের শক ও শোকের মধ্যে কোনটা বেশি তা বোঝার সময় পরিচালক দেন নি। শুটিংয়ের সময় বেড সিনে অভিনয় করার সময় টেকনিক্যাল বিভিন্ন ব্যাপারে এমনকি মানসিক ভাবেও পাশে থেকেছেন মুখার্জিবাবু। পরিচালকের এক্সপিরিমেন্টকে কুর্নিশ জানাই, যা অনির্বাণকে দিয়ে গাইয়ে নিয়েছে “কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালবাসা ছাড়া”, যে গানের প্রাপ্তি একটি ফিল্মফেয়ার।
আবার ঠিক তার পরেই ভিঞ্চিদা তে অন্যতম প্রধান চরিত্র পুলিশ ইন্সপেক্টর বিজয় পোদ্দার। অনির্বাণ এখানেও স্টার হিসেবে ব্যবহার হয়নি ঠিকই কিন্তু তার স্ক্রিনটাইম যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই দক্ষতা তার অভিনয়ে। চিৎকার করে কাউকে অর্ডার দেওয়াই হোক, বা আইনের নিয়ম ঠিক ভাবে বলতে না পেরে তাকিয়ে থাকা বা অশ্লীল কিছু দেখে কোনো কথা না বলেই বিরক্তি বুঝিয়ে দেওয়া পোদ্দারের চরিত্রে অনির্বাণ নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।
পুলিশ অফিসার হয়েই গাড়ি থামলে চলে, সৃজিত মুখার্জীর সাথে পরের ব্রেক, গুমনামি। একসাথে কয়েক মুহূর্ত দেখাও যায় অভিনেতা সৃজিত মুখার্জী ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যকে। অভিনেতা সৃজিত মুখার্জীর নির্দেশে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য চন্দ্রচূড় ধর নামে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্যভেদ করতে।
2020 তে নতুন চুলের স্টাইলে নতুন ফ্যাশনের খোকা, দ্বিতীয় পুরুষে অনির্বাণের অভিনয়, স্টাইল, অ্যাক্সেন্ট সব কিছু নিয়ে এক আলাদা স্টারডম তৈরি করে ফেলেছে অভিনেতা। যেখান থেকে খোকা অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও মালিক সৃজিত মুখার্জীকে নিয়ে নানা ধরণের ছবি, মিম তৈরি হতে দেখা গেছে।

2021 এর কন্ট্রোভার্সিয়াল সিরিজ রেক্কা, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননির আতরের সুবাস ছাড়া লেখা শেষ করা যায় না। এতদিন তো ছিল অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যের স্টার হয়ে ওঠার কাহিনী, কিন্তু আজ সে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচুর মানুষের ভালোবাসার পাত্র। আতর আলীর মতো এতো ছোটো একটা চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে পরিচালকের ওপর ভরসা রাখতে হয়। ধরেই নিলাম অনির্বাণকে svf এর contract অনুযায়ীই অভিনয় করতে হল, কিন্তু এই বৈচিত্র্য দেখার প্রাপ্তি কম কি?
সৃজিত মুখার্জীর আসন্ন দুই ছবি X=প্রেম ও লহ গৌরাঙ্গের নাম রে তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যকে।

এবার একটু বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলি, যেকোনো অভিনেতা তার অভিনয় জীবনের শুরুতেই খুব বেশি এক্সপেরিমেন্টে যায় না, অনেক সময় এতে রিস্ক থাকে। কিন্তু অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য এবং সৃজিত মুখার্জীর কাছে এই এক্সপেরিমেন্টটিই নিয়ম হয়ে গেছে। সৃজিত মুখার্জীর বিভিন্ন সিনেমা দিয়েই যে অভিনেতা অনির্বাণের বিভিন্ন দিক সামনে এসেছে তা অস্বীকার করার উপায় কই?
একটা contract কি একজন পরিচালক ও একজন অভিনেতার রসায়ন তৈরি করে দিতে পারে? অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য ছাড়াও আরও অনেক অভিনেতা svf এর ব্যানারে কাজ করছেন, উল্টো দিকে পরিচালক সৃজিত মুখার্জী ছাড়াও অনেক পরিচালক কাজ করছেন। কিন্তু এই সৃজিত–অনির্বাণ জুটি বাংলার এক সফল জুটি।
সমস্ত জটিলতার বাইরে গিয়ে যদি দেখি সৃজিত মুখার্জীর সিনেমার মধ্যে দিয়ে বাংলা industry পেলো এক নতুন মুখ, আমাদের সবার ভালোবাসার মেদিনীপুর মফস্বলের ছেলে অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য। আবার অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যের মধ্যে দিয়ে পেলাম সৃজিত মুখার্জীর বেশ কিছু বলিষ্ঠ চরিত্র।