‘বাজি(Baazi)’ রিভিউ-
জিতের সুপারস্টারডম বাংলা সিনেমাতে অপ্রতিরোধ্য। যেকোনো সময়, যেকোনো সিচুয়েশনে, জিতের জ্বলজ্বলে গৌরব কখনো অস্তমিত হয়নি। ২০২০ র জানুয়ারিতে ‘অসুর’ এর মুক্তির পর প্রায় দেড় বছর পর এই পুজোয় আবার হলে এসেছে তার সিনেমা ‘বাজি’। এবং অযাচিত ভাবেই এই সিনেমা একক ভাবে কমার্শিয়াল দর্শক দের জন্য। প্রথমেই বলে রাখা দরকার, কেনো মূলধারার কমার্শিয়াল সিনেমা বানানো হবে, বাংলা সিনেমা বাজে ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ… বন্ধ হোক। আপনি যে ধরনের সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, যে ধরনের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন, স্বচ্ছন্দে সেই ধরনের ছবি দেখুন।
প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর আঙ্গুল না তোলাই আজকের আধুনিক মনস্ক চিন্তার অংশ বলে জানি। যাই হোক, ‘বাজি’তে আসা যাক, একটা হার্ডকোর কমার্শিয়াল সিনেমা, যা এক দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমা হিসেবে, এবং কমার্শিয়াল সিনেমা ‘বাজি’কে হনেস্ট রিমেক বলা যেতে পারে।

পরিচালক হিসেবে অংশুমান প্রত্যুষ আগেও ঝকঝকে, দ্রুত গতির, দর্শককে আটকে রাখার মত অ্যাকশন ছবি বানিয়েছেন। এবারেও তার পার্থক্য নেই। নির্মাতার তরফ থেকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে, ভালো ভাবেই তা পালন করেছেন পরিচালক। এবার একটা কথা বুঝতে হবে, যেসব মানুষদের লক্ষ্য করে এই ধরনের কমার্শিয়াল সিনেমা তৈরি হয় তারা কিন্তু গত দশ বছরে সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার একনিষ্ঠ দর্শক হয়ে উঠেছে। তাই কোনো বিখ্যাত নায়কের বিখ্যাত সিনেমা যদি রিমেক করা হয়, তবে সমস্যা এই যে মানুষ ওই সিনেমা আগে থেকে দেখে ফেলেছে, ফলে গল্প কোন দিকে এগোবে তা জানা রয়েছে। সে কারণে কিছু অংশের দর্শকের কাছে বোরিং লাগতে পারে। তবে এখানে কথা হচ্ছে সাউথ ছবির কথা বাদ রেখে।

আদিত্য মুখার্জী লন্ডনে থাকা এক ব্যবসায়ী যে নিজের বাবার শেষশয্যায় বাবাকে কথা দেয়, যে মানুষ একদিন বিশ্বাসঘাতকতা করে তার সমস্ত সম্পত্তি, তার সারা জীবনের সম্মান কেড়ে নিয়েছিল, সেই মানুষের থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে প্রতিশোধ নেবে। আদিত্য মুখার্জী হিসেবে জিৎ, একজন মোটামুটি টেকনিক্যালি জিনিয়াসের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। কিন্তু জিতের পোশাক সেই জিনিয়াস ভাব ফুটিয়ে তোলার বদলে যেনো একজন ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার কে ফুটিয়ে তুলছে। সত্যি জিতের পোশাক কিন্তু বেশ হিংসে করার মত। যাই হোক বাবার চরিত্রে অভিষেক চ্যাটার্জী অনেক দিন পর মূলধারার দর্শকের সামনে আসছেন। তবে ভিলেন কৃষ্ণ কুমারের চরিত্রে সব্যসাচী চক্রবর্তী কিন্তু দুর্দান্ত। খলনায়কের মত মুখের অভিব্যক্তি, অহংকারী, ভীষণ বুদ্ধিমান একজন চরিত্র আর ওই সাংঘাতিক গলার আওয়াজ বেশ লাগছে দেখতে।

কৃষ্ণ কুমারের মেয়ে কায়রা হিসেবে মিমি চক্রবর্তী ভালোই, তবে এরকম দুর্বল, অবলম্বনকারী চরিত্রে মিমিকে চট করে দেখিনা আমরা, আর বর্তমানে মিমির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিছুতেই মিমিকে সিনেমায় যেকোনো চরিত্র অভিনয়ের স্বাধীনতা দেবে না। মিমি নিজের ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন ঘটনায়, রাজনৈতিক কেরিয়ারে বা বিগত সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে যে ইমপ্রেশন তৈরি করেছেন তাতে এখন থেকে এক ধাঁচের চরিত্রই দর্শকের সামনে আনতে হবে কারণ সব ধরনের সিনেমা বা সবধরনের চরিত্র করার আর উপায় নেই।
এখানে জিৎ কিন্তু বাকি বলিউডের থেকে বেশ আলাদা। কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ রাজনৈতিক মতাদর্শ না রেখে জিৎ প্রায় এই মুহূর্তে টলিউডে একক সুপারস্টার। আর ‘বাজি’র মত সিনেমা বা আদিত্য মুখার্জী র মত চরিত্র একমাত্র জিৎ ই টেনে নিয়ে যেতে পারেন। যদি মারামারির দৃশ্য বা ইমোশনাল দৃশ্যের পর নায়ক নায়িকার গলায় গান থাকে, তাহলে তা দর্শকের সামনে তুলে ধরার ক্ষমতা একমাত্র জিতের আছে (রাগ করবেন না দেব ফ্যানেরা, ইহাই সত্য)।

তবে একটাই কথা বলার; এই চরিত্রে জিৎকে একটু বয়স্ক দেখাচ্ছে, আপনি আপনার মত করে চরিত্র বাছলে খুশি হব। এই ছবির সংগীত দিয়েছেন জিৎ গাঙ্গুলি। গান নিয়ে সেরকম কিছু বলার নেই। গল্পের বিদেশী লোকেশন বা স্মার্ট প্রেজেন্টেশনের সাথে খাপ খায়, কিন্তু মনে রাখার মতো নয়। এডিটিং মোহাম্মদ কালামের ঠিকঠাক, সিনেমার দু ঘণ্টা চব্বিশ মিনিট কোথাও বোরিং লাগে না, মূল ছবি দেখা থাকা সত্বেও। কমিক রিলিফ হিসেবে বিশ্বনাথ বসু যেরকম হয়ে থাকেন, ডায়ালগ, এবং তাকে মজা করে উপস্থাপন।
সত্যি এই ছবির সম্পদ কিন্তু জিৎ – সব্যসাচীর মধ্যেকার রেষারেষি। কারণ দুজনই হিরো আর ভিলেন হিসেবে নিজেদের টাইটেলে আছেন এবং এক ফ্রেমের দৃশ্যে দুজনের মুখোমুখি এলে দুজনেরই ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্বকে এগিয়ে দেন দাবার চালে লড়াই করতে। ছবির সংলাপ লেখকের বেশ প্রশংসা প্রাপ্য। বেশ মজার হবে দেখতে এর পরে এই ছবির গল্প কিভাবে দেখতে পারে। সবশেষে বলবো আমরাও হলে বসে হিরোর অ্যাকশন দৃশ্যে হাততালি দিতে চাই, শুধু এমন গল্প থাক যা আগে আমরা দেখিনি। জিতের কাছে অনুরোধ তিনি মূলধারার কমার্শিয়াল ছবি করা যেনো কোনোদিন বন্ধ না করেন। ফ্যামিলি ড্রামা আপনার জন্য নয়। আপনার এই মাস মেগাস্টার ইমেজ যেনো দিনে দিনে আরো বেড়ে উঠুক এটাই প্রার্থনা।