‘চোরাবালি(Chorabali)’ ট্রেলার-
শেষ পর্যন্ত এতদিনের ছোটখাটো হিন্ট দিয়ে অবশেষে প্রকাশ্যে এলো হইচই ব্যোমকেশ সিরিজের সপ্তম সিজন চোরাবালি র ট্রেলার।
14ই অক্টোবর 2017 তে প্রথম বারের জন্যে অনির্বাণ রুপী ব্যোমকেশ আমাদের সামনে এসেছিল। তারপর থেকেই বছরে একবার বা দুবার করে ব্যোমকেশের সিজন এসেছে, হইচই তে, প্রতিবারে একটি একটি করে গল্প কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পর্দায়। তবে ব্যতিক্রম ও আছে, একই চিত্রনাট্যে দুটি গল্প কিভাবে যোগ করা যেতে পারে তাও দেখিয়েছেন পরিচালকেরা। সৌমিক হালদার এর হাতে শুরু হওয়া এই সিরিজ বিভিন্ন সময়ে সৌমিক চট্টোপাধ্যায় এর দায়িত্বে থাকার পর পঞ্চম সিজন থেকে, পূর্বে সিনেমাটোগ্রাফার বর্তমানে পরিচালক সৌমিক হালদার এর অধীনে আসে।
বাঙালির গোয়েন্দা গল্পের প্রতি আমরণ দুর্বলতা, ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্রের অবিস্মরণীয় যশ ও অনির্বাণের সাম্প্রতিক খ্যাতির মিলনে ‘ব্যোমকেশ’ হইচই প্ল্যাটফর্ম এর জন্য প্রায় ট্রাম্প কার্ড এর মত। বিশেষ ওটিটি প্ল্যাটফর্মটি অন্যান্য সময়ে কোনো সিরিজ এর গল্প এক সিজনে আধখ্যাঁচড়া করে শেষ করে, সেই সিজন সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ভুলে যেতে পারে, কিন্তু প্রতি বছর ব্যোমকেশ আনতে, বা প্রতি বছরে দুবার করে ‘ব্যোমকেশ’ আনতে ভোলে না। খুব বেশি অদল বদল বা পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। ব্যোমকেশ বক্সী র সৃষ্টিকর্তাই এমনভাবে গল্প লিখে গেছেন যে ক্রাইম হাউস ড্রামা সহজেই বানানো যায়, গোয়েন্দা ও তার সহকারী কে বাড়ির বাইরে খুব একটা বেরোতে হয় না।
হইচই এর এই সিরিজ সিনেমার তুলনায় যে বদল এনেছে তা হলো, একটি অরিজিনাল গল্প যদি টানটান চিত্রনাট্যে সিনেমার মত দু ঘণ্টার পূর্ণ রূপ না পায়, তো তাকে টেনে বাড়ানোর চেষ্টা করা হয় না। তাই একই গল্প আগে, পড়া থাকলে, অন্য সিরিয়াল বা সিনেমায় দেখা থাকলেও কুছ পরোয়া নেই। যেহেতু গোয়েন্দার একটি একটি করে গল্প টাইমলাইনের পরোয়া না করে ক্রমাগত সিরিজের রূপ দিয়ে যাচ্ছেন, এবং আসল গল্পেও গোয়েন্দার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো অগ্রসরতা দেখানো নেই, তাই বত্রিশ টি সিজন আসাও অসম্ভব নয়(লেখক মাত্র বত্রিশ টি গল্পই লিখেছেন, দুঃখের ব্যাপার!)।
যাই হোক, নতুন সিজন চোরাবালির ট্রেলারে আসা যাক। ব্যোমকেশ বক্সী র গল্প পড়েনি, এমন বাঙালী খুব কম আছে। আর তার পরেও মহান পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ জীবনের শেষ ছবি ‘সত্যান্বেষী’ তে এই গল্পের ওপরেই সিনেমা তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও আপনি এই গল্পের ওপরে টেলিফিল্ম, অডিও স্টোরি, সিরিয়াল সমস্ত কিছু রয়েছে। তাহলে নতুন কি আসছে এই সিজনে, ট্রেলারে এক স্বামী স্ত্রী দম্পতিকে রহস্যময় নজরে দেখানো হচ্ছে, যেখানে অভিনয় করেছে অর্জুন চক্রবর্তী ও উষশী রায়। ব্যোমকেশ বন্ধু অজিতের সাথে সপরিবারে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে চলেছেন।
সেখানে তন্ত্র মন্ত্র, তহবিল তছরুপ ও শিকার ঘটিত ব্যাপারে আমাদের গরীব সত্যান্বেষী তদন্তে জড়িয়ে পড়ছেন। এর বাইরে বলা নিতান্ত অবাঞ্ছনীয়। আর যেহেতু গল্পের নাম চোরাবালি, তাই গল্পের কোথাও এই নামের যোগসূত্র সরাসরি বা পরোক্ষভাবে, রূপক হিসেবে থাকবেই। ট্রেলারে যতটুকু দেখা গিয়েছে, তাতে চোরাবালির নামে মানুষ কোনো এক বালির গর্তে প্রবেশ করছে, 2021 এ দাড়িয়ে এই ধরনের নির্মাণ সত্যিই ভাবিয়ে তোলে।
যাই হোক, 5ই নভেম্বর সিরিজ আসছে সবার সামনে, দেখার এই যে মূল গল্পের, বন্য প্রাণী শিকারের উপভোগ ও বিধবার মৃত সন্তান প্রসব কে ঘৃণ্য চোখে দেখানো, এই দুই ব্যাপারকে কিভাবে আধুনিক আলোয় দেখানো হবে। একটি একটি করে গল্প এই ভাবে ওয়েব সিরিজে এই ভাবেই রূপান্তরিত হতে থাকুক, কিন্তু বর্তমানে সিজন সেভেনে চলা এই সিরিজের মূল চরিত্রদের ব্যক্তিগত অগ্রসর, তাদের জীবনের আদি – অন্ত আপাতত ওই চোরাবালিতে ডুবে।