উরিবাবা র ‘দুয়ারে বৌমা(Duyare Bouma)’ এপিসোড ১-৪ রিভিউ –
রাজদীপ গুহ অভিনীত, সঞ্জয় ভট্টাচার্য পরিচালিত, উরিবাবা র নতুন ওয়েব সিরিজ দুয়ারে বৌমা(Duyare Bouma) অত্যন্ত কাঁচা হাতে নির্মিত। ভারতীয়দের বর্ণবিদ্বেষ এবং ফর্সা চামড়ার প্রতি অপার ভালোবাসা আজকের নয়। বর্ণবিদ্বেষ থিওরি হিসেবে বিদেশ থেকে আমদানি হলেও, ব্রিটিশ আসার বহুদিন আগে থেকে আমাদের রূপের মাপকাঠি হিসেবে ফর্সা আর শ্যাম বর্ণের প্রভেদকে মেনে আসা হয়েছে। পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে অর্থউপার্জনকারী সদস্য পুরুষ বলে, তার গায়ের রং সম্পর্ক নির্মাণে তেমন গুরুত্ব পূর্ণ না হলেও কালো মেয়ে মানে আগে থেকেই প্রায় বিকলাঙ্গতা,ফলস্বরূপ অতিরিক্ত পণের দাবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার খোঁজ, মেয়ের অর্থ উপার্জনের ক্ষমতার সন্ধান।
মানে ব্যাপারটা অনেকটা পাত্রপক্ষ হিসেবে আমরা তো কম্প্রোমাইজ করছি, অন্তত তার বদলে কোনো বাড়তি লাভ পাচ্ছি তো! তবে এর থেকেও এক কাঠি ওপরে দাড়িয়ে আফ্রিকান পুরুষ ও মহিলাদের গায়ের ঘন শ্যাম রং, তাদের মুখের গঠন নিয়ে ঠাট্টা, তামাশা প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে পড়ে সমাজে। অনেক সিনেমায়, বা সিরিয়ালে তাদেরকে মজা করে আদিম মানুষ বলতে কারোরই অপরাধ বোধ হয়না। তাই যখন কোনো গল্পে আপনি বাঙালী পরিবারে ছেলের বউ হিসেবে একজন আফ্রিকান মহিলাকে নিয়ে আসেন। কথা বলার মত অনেক বিষয় আসে, অনেক প্রসঙ্গ চলে আসে। সেই সব কথা যে সিরিয়াস হয়ে বলতে হবে এমন কোনো মানে নেই।
সোশ্যাল প্রবলেম গুলো কমেডির মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরা বোধ হয় গত ৪-৫ বছরে ভারতীয় সিনেমায় বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। একটি সিঙ্গেল বিষয়ের ওপর আবর্তিত হয়ে এই প্লট গুলি সাজানো হয় বলে, এই সিনেমাগুলোতে চিত্রনাট্য বেশ দুর্বল গোছের হয়। যেজন্য এই সিনেমা বা সিরিজ গুলো জনপ্রিয় হয় তা মূলত ডায়লগ ও চরিত্র নির্মাণের জন্য। এই সিরিজে দুর্ভাগ্যবশত সেইভাবে কোনো রকম চেষ্টা করা হয়নি। চিত্রনাট্য অসম্পূর্ণ।
‘দুয়ারে বৌমা’ সিরিজের এপিসোডগুলি অত্যন্ত ছোটো ছোটো যেকোনো চেনা জানা ছকে ফেলা গল্প এত বাজে ভাবে লেখা হয়েছে যে প্রতিটা সিন অত্যন্ত ভাবে অকার্যকর। প্রথমত কি কারণে যে মায়ের কাছে ছেলের আসল গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ভুল ভ্রান্তি তৈরি হলো তা এক্কেবারেই স্পষ্ট নয়। আর এক সিনে, কিভাবে সাগ্নিকের মা, অ্যাঞ্জেলিনার প্রতি প্রসন্ন হয় তা দেখানো যেনো জোড়াতাপ্পি দিয়ে হয়েছে। মূল কথা, গল্পটিকে একটি চেনা ছকে ফেলে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে চিত্রনাট্য লিখেছেন।
রাজদীপ কমেডি অভিনেতা হিসেবে বেশ পোড়খাওয়া, ‘জাপানি টয়’, ‘মিসম্যাচ’ এর মত কমেডি সিরিজে ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এখানে একটা ভালো ডায়লগ দেওয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, ‘দুয়ারে বৌমা’র ডায়লগ লিখতে সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও ডক্টর কৃষ্ণেন্দু চ্যাটার্জী, শুধুমাত্র শ্লেষের ব্যবহার করেছেন আর তাও ক্রমাগত বাঙালী জাতি কে সমালোচনা করতে। এইরকম কথায় কথায় ক্রমাগত বাঙালী জাতিকে সমালোচনা গুলো শুধু বাচালতা লাগে। আর এই ডায়লগ গুলোর বেশির ভাগ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মীরাক্কেল স্টার সৌরভ পালোধীর মুখে। সৌরভ এখানে সেরকম কোনো বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেননি। অন্য সময় ফেসবুকে যেরকম কথাবার্তা বলেন, অন্যের দোষ ভুল ধরেন, সমালোচনা করেন, এখানেও ঠিক তাই করছেন, কোনো পরিবর্তন নেই।
মায়ের চরিত্রে সুচন্দ্রা চৌধুরীকে বোধহয় স্ক্রিপ্ট দেওয়াও হয়নি, শুধু মাত্র সিন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভালো কোনো ডায়ালগ ছাড়া আরতি দেবী শুধু মাত্র ক্যারিকেচার হয়ে দাড়িয়েছে। একই কথা বৃষ্টি রায়ের জন্যেও খাটে। আর ইন্ডিয়ান আফ্রিকান অ্যাকট্রেস তানিয়ারদাজা কুঙ্গুমা র জন্যে কি বলবো, উনি এই সিরিজে প্রথম থেকেই দুধভাত। ডায়ালগ বলে বেরিয়ে গেছেন। আশা করা যায় প্রাক্তন মীরাক্কেল স্টার দের থেকে আরো বেটার স্ক্রিপ্ট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে। সিরিজের মধ্যে রোল এর বিভ্রান্তির মত বাজে জোক, যার পাঞ্চলাইন কি হবে প্রথম থেকে বোঝা যায়, এরকম জোকস কে সম্পদ না বানিয়ে সত্যিকারের ইন্টেলেকচুয়াল স্ক্রিপ্টের অপেক্ষা অবশ্যই করবো। এপিসোড এক থেকে চার আপাতত উরিবাবা চ্যানেলে রয়েছে। আগামী শুক্রবার পরবর্তী এপিসোডের অপেক্ষা রইলো।