প্রাক্তন(Praktan):
গৌরবময় ছয় বছর প্রাক্তন(Praktan) এর, spoiler alert! মুম্বই-হাওড়া জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ac ফার্স্ট ক্লাস কামরায় শুরু হয় সিনেমা, পুরো সিনেমাটা এগিয়েছে রেলের গতির সাথেই। এক কামরায় সুদীপা (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) ও মালিনি সাথে মেয়ে পুতুল উঠে বসে। কথায় কথায় সুদীপা জানতে পারে মালিনি তার প্রাক্তন(Praktan) স্বামী উজানের স্ত্রী। মালিনি একটু মোটা, ছাপোষা গৃহীনী, প্রাণ চঞ্চল, সুদীপা তার বন্ধুকে ফোন করে বলে উজানের এইরকম বউ হওয়া উচিত। অন্য কামরায় চলে যেতে চাইলেও tt জানায় এখন তা সম্ভব নয়, অগত্যা তারা একই কামরায় ট্রেন যাত্রা শুরু করে।
ডিভোর্স নিয়ে চলে গেলেও উজান সম্পর্কে সুদীপার কৌতুহল কিছুমাত্র কমেনি। মালিনির সাথে কথা বলে সে উজান সম্পর্কে, তাদের পরিবার-সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে চায়। মলী জানতে পারে সুদীপা পেশায় architect। নাগপুর থেকে উজান ওঠে ট্রেনে, মালিনির জন্মদিন উপলক্ষে। এই শটটা খুব সুন্দরভাবে নেওয়া হয়েছে, bgm হিসেবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্ঠে রবি ঠাকুরের কবিতা “রেল গাড়ির কামরায় হঠাত দেখা, ভাবিনি সম্ভব হবে কোনোদিন” এর মাঝে দুই প্রাক্তনের(Praktan) দেখা। একটা অন্য রকম aesthetic scene তৈরি করেছে ।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের গোল্ডেন জুটিকে দেখা যায় আর এক কামরায়, তাদের একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা, ভালোবাসা দেখানো হয়। মালিনি আর সুদীপার উজানের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলোকে সমান্তরালভাবে দেখিয়েছেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদ। প্রতিটি সম্পর্কে দুজনেরই compromise খুব দরকার। মালিনি সুদীপাকে বলে “আমার কাছে adjustment মানে হেরে যাওয়া নয় দিদিভাই,”।

সিনেমায় realistic view আনতে ট্রেনে রাখা হয়েছে চার সঙ্গীত শিল্পী অনুপম রায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, উপল সেনগুপ্ত, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাদের গান কখনো nostalgic করে কখনো খুব আনন্দ দেয়। তাদের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে ভেঙে যাওয়া ব্যান্ডের কথা জানতে পারি। প্রাক্তনের(Praktan) serious theme এর মধ্যে মাঝে মাঝেই comic element দেওয়া হয়েছে। অজয় ও তার নতুন বিবাহিত স্ত্রীর মধ্যে কথা বার্তা, নতুন প্রেম, শারীরিক টান সর্বোপরি বিশ্বনাথের অভিনয় কমিক মুহূর্ত তৈরি করেছে।
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের আনকোরা হিন্দি এবং সেই হিন্দির, বিন্দু বিসর্গ বুঝতে না পেরে ঘাড় নেড়ে কর্মীর চলে যাওয়া আর তারপর সৌমিত্র বাবুর বক্তব্য “তুমি তো মারাত্মক হিন্দি বলছো” হাসির মুহুর্ত তৈরি করে। মালিনি বয়সে ছোটো হলেও, সাংসারিক ব্যাপারে খুব mature।সুদীপাই উজানের প্রাক্তন স্ত্রী এটা জানতে পেরেও সে নিজেকে গোপন করে নেয়। উজান সুদীপা দুজনেই স্বীকার করে তাদের দুজনেরই আর একটু সময় দেওয়া উচিত ছিল। ট্রেন হাওড়া আসার পর দুজনেই দুজনের বিরুদ্ধের অভিযোগ ভুলে নতুন জীবনে চলে যায়।
মালিনি-সুদীপার একে অন্যকে জড়িয়ে ধরা আর উজানের ছোট্ট একটি চিরকুট রেখে যাওয়া “ভালো থেকো দীপ” একটা অন্যরকম ভালো feeling দেয়। “আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনে, দূরে যাবে তুমি দেখা হবে না আর কোনো দিনই” দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের জুটি ফিরেছিল বড়ো পর্দায়, তৈরি হল নতুন এক ম্যাজিক। যে কথা না বললেই নয়, জান-দীপের romance এর মাঝে কলকাতা শহরকে নতুন ভাবে খুঁজে পেতে পারে দর্শক। এই বাংলা সিনেমার official হিন্দি remake হয়েছে jalebi নামে। যাদের এখনও প্রাক্তন দেখা হয়ে ওঠেনি তাদের অবশ্যই দেখে নেওয়া দরকার।