‘বৈতরণী(Boitarani)’:
একটা শর্ট ফিল্ম কে খুব সহজে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? সিনেমা যার না যথাযথ শুরু আছে না শেষ। কোনো এক গল্পের বিস্তারিত সূত্রপাত না করে আকস্মিক মাঝখান থেকে শুরু। কিন্তু ‘Addatimes’ এর নতুন শর্ট ফিল্ম ‘বৈতরণী’(Boitarani) কে শর্ট ফিল্ম বলতে হবে তার সিনেমা নির্মাণের বিশেষত্বের জন্য নয়, বরং এই ‘বৈতরণী(Boitarani)’ সিনেমার দৈর্ঘ্যের স্বল্পতার জন্য।
‘বৈতরণী(Boitarani)’ যে গল্প বলতে চেয়েছে, বা বলা যায় যে মুহূর্ত ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছে, তাকে যথার্থ ভাবে দর্শকের সামনে আনার জন্য যতটুকু রানটাইম দরকার, অতটুকু সময়ই নেওয়া হয়েছে। ফলতঃ এটাকে একটা ফিচার ফিল্ম বলাই যায়, কারণ গল্পে চরিত্র নির্মাণ রয়েছে, তাদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ রয়েছে। এইটুকু সময়ের মধ্যে অনেক সামাজিক বিষয়ের সম্বোধন রয়েছে। দুই চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যেই কিন্তু অনেক গুলো ঘটনা দেখানো হয়েছে।

শুরুটা অনেকটা এইরকম, শ্মশান ঘাটে দুই যাত্রী এসে বসেছে। শ্মশান, জীবনের শেষ গতি। সামনে অন্য জগতের যাত্রা শুরু, যেখানে অতীতের কাজের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে নেওয়া যায়, যে মারা গেছে, তার সাথে সম্পর্ক অপ্রাপ্তি গুলো আরেকবার ভাবার মুহূর্ত আসে। দুই মানুষ তাদের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে, নিজেদের জীবনের সুখ দুঃখ, প্রাপ্তি হতাশা ভাগ করে নিচ্ছে। দুই মানুষের দুটি আলাদা জীবন। একজন ছোটো ছোটো মুহূর্তের মধ্যে নিজের আনন্দ দুঃখ খুঁজে নেয়। অন্যজন সিনেমাকে নিজের জীবন করে নিয়েছে, তাই সিনেমার থেকেই বাঁচার রসদ পায়।

গল্পের তিন চরিত্র – অভিনয় করেছেন কুণাল ভৌমিক, দেবপ্রসাদ হালদার, পম্পা ভট্টাচার্য্য। অভিনয়ে সেরকম বলতে কারো খুঁত নেই। প্রত্যেকেই নিজের ভূমিকায় সাবলীল। সঙ্গীতের ব্যবহার খুব ভালো লাগার মতন। সিনেমাটোগ্রাফি খুব ম্যাড়মেড়ে। দুটি সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা নিয়ে এখনই কিছু বলা রসভঙ্গ হবে। তবে এটুকু বলা যায়, সিঙ্গেল স্ক্রীন সিনেমা হল ক্রমাগত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিজেদের দৈন্য-দুর্দশা, অভাবের জেরে। সেই সমস্ত মানুষ যাদের জীবিকা জীবন এর সাথে যুক্ত ছিল তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে একমাত্র উপায় – সিনেমা হল গুলি আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
প্রয়োজনে সরকারকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সিনেমা হল শুধু একটি ভাষার ইন্ডাস্ট্রি নয়, সমস্ত ধরনের ইন্ডাস্ট্রিকেই লাভবান করবে। সিঙ্গেল স্ক্রীন সিনেমা হলের মানুষদের দুর্দশা, অন্তত শর্টফিল্ম এর মাধ্যমে সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। আশা করি আরো অনেক নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলীর “সিনেমাওয়ালা” দের দিকে এগিয়ে আসবে।