Kabir-
ঠিক তিন বছর আগে, 13th এপ্রিলে রিলিজ করেছিল ‘কবীর’, যাকে সমসাময়িক বাংলা সিনেমায় বলা হয় “one of the best thriller”। দেব এর নিজস্ব প্রযোজনায় তৈরি অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় আমরা এমন এক গল্প দেখি যাকে সহজেই আমরা নীরজ পাণ্ডের ‘A Wednesday’ র সাথে তুলনা করতে পারি। পুরো গল্পটাই দুটো মানুষের মুখোমুখি সওয়াল জবাবের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়, এগিয়ে যায় আর শেষ পর্যন্ত অন্তিম পরিণতিতে গিয়ে পৌঁছয়।
আশা করছি এই তিন বছরে প্রত্যেকে আমরা সিনেমাটা একবারের জন্য দেখে ফেলেছি, তাই প্লট কে খোলাখুলি ডিসকাস করলে আশা করি spoiler হবে না! প্রথমেই বলতে হয়, এই গল্পে মূল চরিত্র দুই নয় তিন জন। শুধু মাত্র ইয়াসমিন খাতুন আর অলতাফ কবীর ছাড়া তৃতীয় চরিত্র হলো, ট্রেন। দুরন্ত এক্সপ্রেস ননস্টপ মুম্বাই টু হাওড়া ননস্টপ জার্নির বিশেষ বৈশিষ্ট্য না থাকলে এই গল্প সম্ভব ছিল না। সবচেয়ে প্রশংসাযোগ্য এখানে বোধ হয় দেব এর daring। যেখানে বাংলা কমার্শিয়াল সেফ সাইড খেলতে গিয়ে একটার পর একটা সফল সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার রিমেক কষছে, সেখানে এরকম একটা রিস্কি প্রজেক্ট কে execute করা? Hands off!
রিস্ক নিয়েছিলেন বলেই আমরা রুক্মিণী মিত্রর কেরিয়ারের সবচেয়ে প্রশংসনীয় অভিনয় দেখতে পেলাম। এই গল্প অনেক গুলো বিষয়কে সামনে আনে। প্রথম, এবং যে বার্তাটির ওপর অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম হয় না, যার জন্য আমেরিকার জাপানের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলাটাও যেমন সন্ত্রাসবাদ, একইরকমভাবে হিন্দু চরমপন্থীদের একটি নিরীহ মুসলিম পরিবার কে শেষ করা আর তারপর জোর করে বসটবাটী থেকে তাড়িয়ে দেওয়া টাও সন্ত্রাসবাদ।

এর থেকে পরের পয়েন্ট এ যাওয়া যায়, যা হলো সন্ত্রাসবাদী কে বেশিরভাগ সময়ে আমরাই তৈরি করে দিই। আমরাই সহজ সরল মানুষকে হিংসা ছড়িয়ে দেশ ও সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিই। এই terrorism এর আবার দুটো দিক আমরা এই ছবিতে দেখতে পাই। দেবকে বার বার ছবিতে আরবি তে কিছু বলতে শুনি, যার মানে ইংরেজিতে দাঁড়ায়, “Muslims are the best”। এই ধরনের চিন্তাকে বলে Supremacy। অর্থাৎ সবসময় নিজেকে বা নিজের গোষ্ঠী কে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবা। এই ধরনের চিন্তা নিশ্চিতভাবে মানুষকে উগ্রবাদী নীতিতে এগিয়ে নিয়ে যায়।
দুই, সন্ত্রাসবাদীদের একটা চেনা ছক, কাছের মানুষকে আটক করে, জীবনহানির ভয় দেখিয়ে কোনো একজনের থেকে কাজ হাসিল করা। কিন্তু Tit for Tat করে যদি একই পদ্ধতি সন্ত্রাসবাদীদের ওপর করা হয়, তখন? সিনেমার ক্লাইম্যাক্স এও একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে পরিচালকের। তাঁর মতে, একজন সন্ত্রাসবাদী কে, একজন blast mastermind কে জেলে বন্দী করে রাখা টা বোকামি। কেনো তাকে জেলবন্দী করা যাতে সে আবার কাউকে অপহরণ করে নিজে মুক্তি পেয়ে যায়? এই যুক্তির সমর্থনে-বিপক্ষে অনেক কথা উঠবে।
কিন্তু এখানে আমার একটাই বক্তব্য, একটা পশু কিন্তু নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় অন্য পশুকে হত্যা করে, কিন্তু মানুষকে নিজের প্রাথমিক অস্তিত্ব রক্ষার্থে আরেকজন মানুষকে মারতে হয় না, এখানেই মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা ফুটে ওঠে। কিন্তু যখন একটা মানুষ ঠান্ডা মাথায় হাজার হাজার মানুষকে মারার প্ল্যান কষে, তখন সে নিজের মনুষ্যত্ব হারায়। তাই তাকে জীবন থেকে মুক্তি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সব শেষেও পরিচালক এমন ভাবে সন্ত্রাসবাদীদের জীবন টাকে কাছ থেকে দেখিয়েছেন তাতে বলা হচ্ছে, এই মানুষ গুলো কিন্তু আকাশ থেকে পড়ে নি বা মাটি ফুঁড়ে বেরোয়নি।
এদের আর পাঁচটা মানুষের মতোই সাধারণ জীবন আছে, বাবা-মা আছে, প্রেমিকা আছে। তাই দিনের শেষে যখন এক সন্তান তার ঘরে তার বাবা বা মায়ের কাছে ফেরে না, হ্যাঁ কষ্ট হয় বটে। সব মিলিয়ে সন্ত্রাসবাদী ভাবধারা র মুলে পৌঁছেছে এই থ্রিলার। শেষে একটা খুঁতই বলবো। যদি 1992 সালেও যদি কারো জন্ম হয়ে থাকে তো 2018 তে তার বয়স হয় 24। তাই রুকসানা র বয়স কোথায় কম পড়ে গেলো! পিতা পুত্রের অঙ্কে ওর বয়সটা কেউ বাড়াতে ভুলে গেছে বুঝি! যাই হোক On M.Y. Opinion, ‘Kabir’ is 75% OP and 76% OK
