Two:
সত্যজিৎ রায় মে মাস মানেই রে মাস, আর রে মাসের celebration যে চলতেই থাকবে সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন কাজ ফিরে দেখার মাধ্যমে তাতে সন্দেহ নেই। আজ ফিরে দেখি রায় মশাইয়ের শর্ট ফিল্ম “Two”।ESSO World Theatre এর জন্য বাংলা পটভূমিতে ইংরেজি ভাষায় এক সিনেমা তৈরি করার অনুরোধ করা হয় সত্যজিৎ রায়কে যার প্রোডাকশন খরচ বহন করে আমেরিকার তেল কোম্পানি ESSO। সাইলেন্ট ফিল্মের প্রতি তার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা থেকে তিনি তৈরি করেন Two, একটি ভাষাহীন ছবি।1964 সালে বারো মিনিট চার সেকেন্ডের সাদা কালো এই ছবিটি তৈরি করেন দুটি বাচ্চাকে নিয়ে। ধনী পরিবারের বাচ্চা, যে ঠান্ডা পানীয় খেতে খেতে আগুন দিয়ে বেলুন ফাটাচ্ছে, ঘরে সাজানো সারি সারি আধুনিক যন্ত্রচালিত খেলনা।
হঠাত তার কানে আসে বাঁশির শব্দ, এক পথশিশু নিজের মনে বাঁশি বাজাচ্ছে। আর সেখানেই শুরু হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সে তার খেলনা সাইরেন বাজিয়ে বুঝিয়ে দেয় সে শক্তিশালী। এরপর দুজনের মধ্যে চলে খেলনার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। আধুনিক খেলনার কাছে প্রতিবার হেরে যায় সাধারণ বাঁশি, তির-ধনুক, মুখোশ, ঘুড়ি। সবদিক থেকে হারিয়ে দিয়ে এরকম sadist খুশি নিয়ে নিজের ঘরে খেলনা নিয়ে খেলতে থাকে বড়োলোক শিশুটি। আবার সে শুনতে পায় বাঁশি বাজিয়ে খেলছে সেই পথশিশুটি।আপাত দৃষ্টিতে ধনী গরীবের ইগোর লড়াই বলে মনে হলেও সিনেমা ক্রিটিকরা anti-war messege-এর কথাই বারবার বলেছেন।1964 মানেই ভিয়েতনামের আন্দোলন, ভিয়েতনাম স্লোগান।
তাই ধনী, অহংকারী, ওপরে থাকা বাচ্চাটি হয়তো শক্তিশালী আমেরিকা, আর পথশিশুটি ভিয়েতনাম। সবদিক থেকে হেরে গিয়েও ভিয়েতনামের নতুন করে খুশি থাকার বার্তা। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় গেজ্ খুব গুরুত্বপূর্ণ, সিনেম্যাটোগ্রাফীর নিখুঁত এঙ্গেলে যা ফুটে উঠেছে। ভাষাহীন সিনেমায় bgm-ই হল ভাষা। আর এই সিনেমার মিউজিক ডিরেক্ট করেছেন ডিরেক্টর নিজেই, এমনকি বাঁশির আওয়াজ। এই ছোট্টো সিনেমাটি প্রায় হারিয়েই গেছিল। 1992 সালে lifetime অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর, অ্যাকাডেমি ফাউন্ডেশন রায়ের সব সিনেমা উদ্ধার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ম মিউজিয়াম থেকে পাওয়া যায় Two এর নেগেটিভটি জোসেফ লিন্ডারের নেতৃত্বে বহু প্রচেষ্টার পর 2016 সালে অডিওসহ 16mm এর ফিল্ম উদ্ধার হয়। যা তাঁদের অফিসিয়াল ইউটিউবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়।